ই-মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেট বা অনলাইনের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করা হয়। ক্রেতাদেরকে সর্বোচ্চ ভ্যালু প্রদানই ই-মার্কেটিং-এর প্রধান উদ্দেশ্য। নিচে ই-মার্কেটিং-এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা করা হলো-
১. বিশ্বব্যাপী পৌঁছানো (Global reach): ই-মার্কেটিং এর সবচেয়ে সুবিধার বিষয়টি হলো বিশ্বব্যাপী ক্রেতা বা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো। ই- মার্কেটিং এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যার সহায়তায় আমরা ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পণ্যের প্রচার করতে পারি।
২. কম খরচ (Lower cost) : ই-মার্কেটিং জনপ্রিয় হবার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এর খরচ খুবই কম। অল্প খরচ করে যে কেউ এই মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। খুব অল্প খরচ করেই বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর একটি অনন্য উপায় হলো ই-মার্কেটিং।
৩. পরিমাপযোগ্য (Measurable): বিভিন্ন ওয়েব এনালাইটিক্স এবং অনলাইন মেট্রিক্স টুলস ব্যবহার করে সহজেই জানা যায় যে কোম্পানি বা ব্যক্তি কর্তৃক ক্যাম্পেইন কতটুকু ফলপ্রসূ হয়েছে। বিশ্বের কতজন মানুষ পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপনটা দেখেছে তা সহজেই তাৎক্ষণিক জানা যায়।
৪. ব্যক্তিগতকরণ (Personalization) : ই-মার্কেটিং-এর আরেকটি সুবিধার দিক হলো ব্যক্তিগতকরণ। কেননা এ প্রক্রিয়ায় কারা পণ্যটি দেখছে, কারা পণ্যটি পেতে আগ্রহী ইত্যাদি বুঝে সে অনুযায়ী তাদের সাথে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা যায়। ই-মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের একটি ডেটাবেজ থাকে, যা ওয়েবসাইটের সাথে সংযুক্ত। এর ফলে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করা মাত্রই গ্রাহকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়।
৫. গ্রাহকদের সাথে সহজে কানেক্টিভিটি (Easy to connect with customer) : ই-মার্কেটিং-এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেই গ্রাহকদের সাথে কানেক্ট হয়ে তাদের বিভিন্ন মতামত গ্রহণ করা যায়।
৬. ঝুঁকি কম (Less risky): ই-মার্কেটিং-এর ঝুঁকি অত্যন্ত কম। কেননা এক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ কম। আর খরচের পরিমাণ কম হওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণও কম হয়ে থাকে।
৭. দ্রুত প্রতিক্রিয়া (Fast response): ই-মার্কেটিং-এর সফলতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো গ্রাহকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। দূরত্ব যতই হোক না কেন, মনে হবে একজন আরেকজনের খুব কাছাকাছি বসে পণ্যের কেনা- বেচা করছেন ।
যার ফলে বর্তমানে বিশ্বকে বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ। ওপরে উল্লিখিত সুবিধাসমূহ ছাড়াও ই-মার্কেটিং-এর আরও সুবিধা বিদ্যমান। যেমন- সহজ তথ্য সংগ্রহ ও মূল্যায়ন, অধিক আন্তঃসংযোগ, মত প্রকাশের সুযোগ, সহজ প্রবেশযোগ্যতা ইত্যাদি।
১. বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা (Global competition): ই-মার্কেটিং যেহেতু বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম সেহেতু এর প্রতিযোগিতাও বিশ্বব্যাপী। প্রায় একই শ্রেণির দর্শক বা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে বিশ্বব্যাপী চলছে অনলাইন প্রতিযোগিতা।
২. দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার অভাব (Lack of skills and experience): অনলাইন বা ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ হতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না এমন কারো দ্বারা ই-মার্কেটিং করা সম্ভব না। ডিজিটাল বা অনলাইন মার্কেটিং-এর সফলতা অর্জন তখনই সম্ভব হয় যখন মালিক ও কর্মচারীরা দক্ষ হয়। অন্যথায়, কোনোভাবেই তারা বাজারে টিকে থাকতে পারবে না।
৩. প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা (Reliance on technology): ই-মার্কেটিং-এর আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো— এ কার্যক্রম পুরোটাই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। যেমন- মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট ইত্যাদি।
৪. সময় ব্যয় (Time consuming): ই-মার্কেটিং-এর বড় সমস্যা হলো এতে সময়ের খুব অপচয় হয়। বিভিন্ন কারণে যেমন- একটি লিংককে প্রবেশ করলে আবার আরেকটি লিংককে প্রবেশ করার আগ্রহ তৈরি হয়। খুব প্রয়োজন নেই তারপরও বিভিন্ন সাইট ঘুরে ঘুরে অনেকেই সময়ের অপচয় ঘটায়।
৫. নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা ইস্যু (Privacy and security issues): প্রযুক্তির যুগে ক্রেতাদের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার বিষয়টি এখন প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠেছে। হ্যাকিংসহ নানাবিধ কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে ক্রেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
৬. রক্ষণাবেক্ষণ খরচ (Maintainance cost) : ই-মার্কেটিং-এর সার্বিক খরচ কম হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি। বিভিন্ন টুলস বা সরঞ্জামাদি ক্রয়ে এবং তা রক্ষণাবেক্ষণে খরচ হয়ে থাকে। যেমন- ল্যাপটপ ক্রয় এবং তা নষ্ট হয়ে গেলে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম নয়।
Read more